Breaking News

কোরআনের দৃষ্টিতে যারা বুদ্ধিমান

পবিত্র কোরআনের একাধিক স্থানে আল্লাহ ‘উলুল আলবাব’ তথা বুদ্ধিমান ও বিচক্ষণদের সম্বোধন করেছেন। আল্লাহর এই সম্বোধন ইতিবাচক ও প্রশংসাসূচক। কোরআনের এসব সম্বোধনর দ্বারা প্রমাণিত হয়, ‘উলুল আলবাবরা’ আসমানি হেদায়েত ও কল্যাণের অধিক নিকটবর্তী। যেমন মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে বোধসম্পন্ন ব্যক্তিরা! আল্লাহকে ভয় কোরো, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পারো।’ (সুরা মায়িদা, আয়াত : ১০০)

কোরআনের দৃষ্টিতে যারা বুদ্ধিমান

বুদ্ধিমানের পরিচয়

উলুল আলবাব বা বুদ্ধিমান তারাই, যারা সুস্থ জ্ঞান ও বুদ্ধির অধিকারী। যার মাধ্যমে তারা কল্যাণ চিনতে পেরে তা অনুসরণ করে এবং অকল্যাণ চিহ্নিত করে তা থেকে বিরত থাকে। কোরআনের ১৬ জায়গায় ‘উলুল আলবাব’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে, যার মাধ্যমে সেসব বুদ্ধিমান ও বিচক্ষণ ব্যক্তিদের বোঝানো হয়েছে, যারা ভারসাম্যপূর্ণ জ্ঞান ও সুস্থ প্রকৃতির অধিকারী, যারা ওহি দ্বারা উপকৃত হতে পারে এবং আল্লাহর কোরআনের মর্ম বুঝতে পারে। সর্বোপরি যারা আল্লাহর পুরস্কার লাভের আশায় এবং শাস্তির ভয়ে শরিয়তের বিধি-বিধান পালন করে।

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা তাগুতের পূজা থেকে দূরে থাকে এবং আল্লাহর অভিমুখী হয়, তাদের জন্য আছে সুসংবাদ। অতএব, সুসংবাদ দাও আমার বান্দাদের, যারা মনোযোগসহ কথা শোনে এবং তার মধ্যে যা উত্তম তা গ্রহণ করে। তাদের আল্লাহ সৎপথে পরিচালিত করেন এবং তারাই বোধশক্তিসম্পন্ন।’ (সুরা ঝুমার, আয়াত : ১৭-১৮)

বুদ্ধিমানের বৈশিষ্ট্য : পবিত্র কোরআনে বুদ্ধিমানদের যেসব বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হয়েছে, তার কয়েকটি তুলে ধরা হলো।

আল্লাহভীরু : বুদ্ধিমান ব্যক্তিরা সর্বদা সর্বত্র আল্লাহকে ভয় করে। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা পাথেয় সংগ্রহ কোরো, আত্মসংযমই শ্রেষ্ঠ পাথেয়। হে বোধসম্পন্ন ব্যক্তিরা! তোমরা আমাকে ভয় কোরো।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৯৭)। অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে বুদ্ধিমানরা! আল্লাহকে ভয় কোরো।’ (সুরা তালাক, আয়াত : ১০)

কোরআন গবেষক : বুদ্ধিমান ব্যক্তিরা কোরআনসহ আল্লাহর অন্যান্য নিদর্শন নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করে থাকে। ইরশাদ হয়েছে, ‘এক কল্যাণময় কিতাব, এটা আমি তোমার প্রতি অবতীর্ণ করেছি, যাতে মানুষ এর আয়াতগুলো অনুধাবন করে এবং বোধশক্তিসম্পন্ন ব্যক্তিরা গ্রহণ করে উপদেশ।’ (সুরা সাদ, আয়াত : ২৯)

সুপথ লাভকারী : উলুল আলবাব তথা বুদ্ধিমানরা আসমানি হেদায়েত লাভে অগ্রসর। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি অবশ্যই মুসাকে দান করেছিলাম পথনির্দেশ ও বনি ইসরাইলকে উত্তরাধিকারী করেছিলাম সেই কিতাবের পথনির্দেশ ও উপদেশস্বরূপ বোধশক্তিসম্পন্ন লোকদের জন্য।’ (সুরা মুমিন, আয়াত : ৫৩-৫৪)

 আল্লাহর পরিচয় অনুসন্ধানকারী: জ্ঞানী ও বোধসম্পন্ন ব্যক্তিরা আল্লাহর সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা-গবেষণার মাধ্যমে আল্লাহর পরিচয় অনুসন্ধান করে। ফলে তারা আল্লাহর বড়ত্ব ও মর্যাদা সম্পর্কে বেশি অবগত থাকে। ইরশাদ হয়েছে, ‘তুমি কি দেখ না, আল্লাহ আকাশ থেকে বারি বর্ষণ করেন, অতঃপর তা ভূমিতে নির্ঝররূপে প্রবাহিত করেন এবং তদ্দ্বারা বিবিধ বর্ণের ফসল উৎপন্ন করেন। তারপর তা শুকিয়ে যায়। ফলে তোমরা তা পীতবর্ণ দেখতে পাও, অবশেষে তিনি তা খড়কুটোয় পরিণত করেন। এতে অবশ্যই উপদেশ আছে বোধশক্তিসম্পন্নদের জন্য।’ (সুরা ঝুমার, আয়াত : ২১)

উপদেশ গ্রহণকারী : বোধশক্তিসম্পন্ন ব্যক্তিরা মনোযোগসহ মানুষের কথা শোনে এবং তা থেকে উপদেশ গ্রহণ করে। ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা মনোযোগসহ কথা শোনে এবং তার মধ্যে যা উত্তম তা গ্রহণ করে, তাদের আল্লাহ সৎপথে পরিচালিত করেন এবং তারাই বোধশক্তিসম্পন্ন।’ (সুরা ঝুমার, আয়াত : ১৮)

 প্রজ্ঞাবান : বোধশক্তিসম্পন্ন ব্যক্তিরা সাধারণত প্রজ্ঞার অধিকারী হয়ে থাকে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ যাকে ইচ্ছা প্রজ্ঞা দান করেন। আর যাকে প্রজ্ঞা দান করা হয়, তাকে প্রভূত কল্যাণ দান করা হয়। বোধশক্তিসম্পন্নরাই উপদেশ গ্রহণ করে।’ (সুরা ইউসুফ, আয়াত : ১১১)

ভালো-মন্দের পার্থক্যকারী : বুদ্ধিমান লোকেরা ভালো-মন্দের মধ্যে পার্থক্য করতে পারে। ফলে তারা ভালোর অনুসরণ করে এবং মন্দ থেকে বিরত থাকে। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তা যে ব্যক্তি সত্য বলে জানে আর যে অন্ধ তারা কি সমান? উপদেশ গ্রহণ করে শুধু বিবেকশক্তিসম্পন্নরাই।’ (সুরা রাদ, আয়াত : ১৯)

বুদ্ধিমানদের কর্মপন্থা

উল্লিখিত আয়াতগুলোসহ অন্যান্য আয়াত থেকে উলুল আলবাবদের নিম্নোক্ত কাজগুলো চিহ্নিত করা যায় :

১.       অতীত থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা।

২.       আসমানি হেদায়েতের অনুসন্ধান করা।

৩.       আল্লাহর নিদর্শন ও সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করা।

৪.       আল্লাহর নির্দেশ পালন করা।

৫.       আল্লাহ যা নিষেধ করেছেন, তা পরিহার করা।

৬.       সত্য ও সঠিক বিষয় চিনতে পারা।

৭.       জ্ঞানার্জন করা।

৮.       আল্লাহমুখী জীবন যাপন করা।

৯.       পরকালীন জীবনের প্রস্তুতি নেওয়া।

১০.     আল্লাহর রহমতের আশা করা এবং তাঁর শাস্তিকে ভয় করা।

আল্লাহ সবাইকে সুপথের অনুসারী করুন। আমিন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ